আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম প্রধান শস্য রপ্তানিকারী দেশ ইউক্রেন। ইউক্রেন থেকে শস্য বাইরের দেশে পাঠাচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার অধিকৃত ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে নিযুক্ত রুশ কর্মকর্তারা এমনটাই বলেছেন। খবর বিবিসির।
তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ইউক্রেনের প্রায় ছয় লাখ টন শস্য চুরি করেছে রাশিয়া। এর মধ্য থেকে কিছু শস্য রপ্তানি করেছে রাশিয়া। এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। ইউক্রেনের শস্য চুরির কথা অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
ইউক্রেনে মজুত করা শস্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে দেওয়া আন্তর্জাতিকভাবে জরুরি হয়ে উঠেছে। বছরে কয়েক লাখ টন শস্য আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করে দেশটি। ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরের বন্দর রাশিয়ার নৌবাহিনী অবরুদ্ধ করে রাখায় জাহাজে শস্য স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।
রাশিয়া বলছে, কৃষ্ণসাগর উপকূল থেকে ইউক্রেনকে বিস্ফোরক সরাতে হবে। তাহলে কৃষ্ণসাগরের করিডর ধরে ভালোভাবে শস্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, ইউক্রেনের কাছ থেকে চুরি করা গম খরাপীড়িত আফ্রিকার দেশগুলোয় বিক্রির চেষ্টা করছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ১৪টি দেশে সতর্কতা জারি করেছে। এসব দেশের বেশির ভাগই আফ্রিকার। শস্যভর্তি রাশিয়ার কার্গো জাহাজগুলো ইউক্রেনের নিকটবর্তী বন্দরগুলো ছেড়ে যাচ্ছে বলেও ওই খবরে জানানো হয়।
কী বলছে রাশিয়া?
রাশিয়ার অধিকৃত ঝাপোরজিয়া এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়েভজেনি বালিতস্কি বলেছেন, মালবাহী ট্রেনে ক্রিমিয়ার উদ্দেশে শস্য গেছে। সেখান থেকে এসব শস্য মধ্যপ্রাচ্যে নেওয়া হবে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া।
রুশ সরকারি টিভিকে বালিতস্কি বলেন, এ বিষয়ে তুরস্কের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হচ্ছে। তবে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। ক্রিমিয়ায় রুশ ‘দখলদার কর্তৃপক্ষের’ মুখপাত্র ওলেগ ক্রইউচকভ বলেন, ঝাপোরজিয়ার মেলিতোপল শহর থেকে শস্যবোঝাই ১১টি ওয়াগন ক্রিমিয়ায় এসে পৌঁছেছে। রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা আরআইএকে তিনি বলেন, অধিকৃত খেরসন এলাকা থেকে শস্য পরিবহন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রাশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি। গতকাল বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ শস্যসংকট নিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর সঙ্গে আঙ্কারায় আলোচনা করেছেন। তবে এ বিষয়ে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি।
ইউক্রেনে গম রপ্তানিতে রাশিয়ার বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লাভরভ। তিনি বলেন, ওডেশা ও অন্যান্য বন্দরের জলসীমা থেকে বিস্ফোরক সরানোর দায় ইউক্রেনের ছিল।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, তাঁরা সাগর উপকূল থেকে বিস্ফোরক সরাতে পারবে না। কারণ, রাশিয়া ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের করিডর ব্যবহার করে হামলা চালাতে পারে।
বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের জন্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে রাশিয়া। তবে পশ্চিমারা বলছে, রাশিয়া খাদ্যের জোগানকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। সাগরের করিডরগুলো নিরাপদ রাখতে চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে তুরস্ক।
ইউক্রেন কী বলছে
তুরস্কে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাসিল বদনার গত সপ্তাহে বলেন, রাশিয়া ক্রিমিয়া থেকে চুরি করা শস্য পাঠাচ্ছে। যেসব জায়গায় শস্য যাবে, তার মধ্যে তুরস্কও রয়েছে।
রয়টার্সকে ভাসিল বদনার বলেন, ‘আমাদের সহযোগিতা করতে আমরা তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। তুর্কি কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুসারে যারা শস্য চুরি করছে ও বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চালু করছি।’
ইউক্রেনের শস্যবিষয়ক সংগঠনের প্রধান (গ্রেইন অ্যাসোসিয়েশন) মাইকোলা গরবাচভ সতর্কতা জারি করে বলেছেন, যদি ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে রপ্তানি শুরু না হয়, তাহলে এ মাসের শেষে ফসল সংগ্রহের ওপর প্রভাব পড়বে। গরবাচভ আরও বলেন, আগামী বছর স্থলপথ, নদী ও রেলপথ দিয়ে ইউক্রেনের দুই কোটি টন শস্য রপ্তানি করা যাবে। অথচ গত বছর এসব পথে চার কোটি টনের বেশি শস্য রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে।
বিশ্ব এত চাপে কেন
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শস্য, রান্নার তেল, জ্বালানি তেল ও সারের জন্য বড় মূল্য চোকাতে হচ্ছে বিশ্বকে। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা আরোপও এ সংকটের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্বে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গমের জোগান দেয় রাশিয়া ও ইউক্রেন। এর মধ্যে ইউক্রেন প্রায় ১০ শতাংশ গমের জোগান দেয়। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ১৬ শতাংশ ভুট্টা সরবরাহ করেছে ইউক্রেন। আর ৪২ শতাংশ সূর্যমুখী তেল সরবরাহ করেছে দেশটি।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অবরুদ্ধ অবস্থা ও কিছু দেশ শস্য মজুত করায় বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের প্রভাব পড়েছে। এতে একধরনের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।
সোমালিয়ায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিবিষয়ক কর্মকর্তা পেট্রক উইলটন বলেন, আফ্রিকায় চরম খরা চলছে। এ বছরের শেষ নাগাদ খাদ্যসংকটে থাকা দেড় কোটি মানুষের সংখ্যা বেড়ে দুই কোটিতে পৌঁছাবে।
0 মন্তব্যসমূহ